মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৪৭ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
জগন্নাথপুরে আদালতের নির্দেশ মোতাবেক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ও নির্ধারিত তারিখে দোকানঘর  নিলাম হয়নি!   সাংবাদিক শংকর রায়ের মৃত্যু তে প্রবাসী  সাংবাদিক তৌফিক আলী মিনার এর শোক জগন্নাথপুর প্রেসক্লাব সভাপতি শংকর রায় আর নেই: প্রেসক্লাবের শোক এবার ৩২ টাকা কেজিতে ৫ লাখ টন ধান,   ১২ লাখ টন চাউল কিনবে সরকার  জগন্নাথপুরে লন্ডন প্রবাসীর বাড়ী বেদখল চেষ্টায় সংবাদ সম্মেলন জগন্নাথপুরে হাওরে ধান কাটার ধুম, বঙ্গবন্ধু-১০০ জাতের ধানে চিটা শান্তিগঞ্জে বর্ণাঢ্য আয়োজনে পহেলা বৈশাখ উদযাপন শান্তিগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঈদ পুনর্মিলনী ও আলোচনা সভা  উন্নত জাতি বিনির্মাণে সাংবাদিকরা অগ্রণী ভূমকিা পালন করেন: এমএ মান্নান এমপি জগন্নাথপুরে সার-বীজ বিতরন কালে সাবেক মন্ত্রী, দেশে এখন পরিবর্তনের হাওয়া বইছে

জগন্নাথপুরে ব্রি-২৮ ধানে চিটা : কৃষকদের মধ্যে হাহাকার

জগন্নাথপুরে ব্রি-২৮ ধানে চিটা : কৃষকদের মধ্যে হাহাকার

 

বিশেষ প্রতিনিধি ::
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে এবার বোরো মৌসুমে ব্রি-২৮ জাতের ধান চাষ করে অনেক কৃষক লাভবান হলেও অনেক কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। ব্লাস্টরোগে আক্রান্ত হয়ে অনেক কৃষকের ব্রি-২৮ ধান মরে যাওয়ায় কৃষকরা ধান কাটতে পারেন নি। উচ্চ ফলনশীল ও আগাম জাতের এ ধান উপজেলার কৃষকদের কারো জন্য পৌষ মাস কারো জন্য সর্বনাশ ডেকে এনেছে।

উপজেলার নলুয়া, মই, দলুয়া ও পিংলার হাওরে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে ব্রি ২৮ জাতের ধান শুকিয়ে মরে গেছে। ফলে কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন। পিংলার হাওরে প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়। এর মধ্যে অধিকাংশ কৃষক ব্রি-২৮ ধান চাষ করেন। এ হাওরের অধিকাংশ জমির ধান শুকিয়ে মরে গেছে। হাওরের অনেক জমির ধান ছুচা (চিটা) হাওয়ায় কৃষকরা কাটেন নি। কৃষকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, গত দুই বছর ধরে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারনে বোরো ফসল গোলায় তোলতে পারেন নি কৃষকরা। ফলে দু:খে কষ্টে বেঁচে থাকার জীবন যুদ্ধে আগামীর স্বপ্ন নিয়ে আবারও নিজের ক্ষেতে নানা প্রতিকুলতার মধ্যে চাষাবাদ শুরু করেন। অকাল বন্যায় হাত থেকে এ উপজেলার কৃষকরা অনেক বছর ধরে উচ্চ ফলনশীল ও আগাম জাতের ব্রি-২৮ ধান বেশি আবাদ করেছেন। উপজেলার সর্ববৃহৎ নলুয়া হাওরের উচু অঞ্চলের কিছু কিছু স্থানে ব্রি-২৮ জাতের ধান এবার ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে জমিনের ফসল বিনষ্ট হয়ে গেছে। তবে অনেক কৃষকের জমিতে ভালো ফলন হয়েছে।
পিংলার হাওরের জগন্নাথপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল বারী জানান, ৫ কেদার (৩০ শতকে ১ কেদার) জমিতে ব্রি-২৮ ধান করেছিলেন, কিন্তু জমির সবগুলো ধানই মরে ছুচা হয়ে গেছে। ফলে তিনি এই ৫ কেদার জমির ধান কাটেননি।

পিংলার হাওর পাশ্ববর্তী জগন্নাথপুর গ্রামের কৃষক রাশিদ মিয়া জানান, ১৮ কেদার জমি করেছিলাম। সবগুলো জমির অধিকাংশ ধান ছুচা হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে ৬ কেদার জমির ধান কেটেছি। প্রতি কেদারে ২/৩ মন ধান পাওয়া যাবে। এ অঞ্চলের পিংলার হাওরের অধিকাংশ জমির ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কৃষকদের মধ্যে হাহাকার চলছে।

মই হাওরের কৃষক ভবানীপুর গ্রামের আছলম উল্যাহ বলেন, তিনি এবার ১২ কেদার জমিতে ব্রি-২৮ আবাদ করেছিলেন তারমধ্যে ৫ কেদার জমির ধান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বাকী সাত কেদার জমির ব্রি-২৮ বাম্পার ফলন হয়েছে।
নলুয়া হাওরের বেরী গ্রামের কৃষক আজাদ মিয়া বলেন, ব্রি- ২৮ জাতের ধান ৬ কেদার ক্ষেতে চাষবাদ করেছি। এর মধ্যে ৪ কেদার ক্ষেতের ফসল নষ্ট হয়েছে অজ্ঞাত রোগে।

গয়াসপুর গ্রামের বর্গাচাষী কৃষক সুলেমান মিয়া বলেন, তিন কেদার জমিতে ব্রি-২৮ আবাদ করেছিলেন। সব ধান চিটা হয়ে গেছে।
স্থানীয় উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সুত্র জানায়, জগন্নাথপুর উপজেলার নলুয়া, মই, পিংলা, দলুয়া, সুরাইয়া-বিবিয়ানা, জামাইকাটা, হাপাতি, পারুয়া, বানাইয়া সহ ছোটবড় ১৫ টি হাওরে প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়। তারমধ্যে ৯ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমিতে ব্রি-২৮ আবাদ করা হয়। এসব হাওরে উচ্চ ফলনশীল ও আগামজাত হিসেবে ব্রি-২৮ ধান আবাদ করা হয়। প্রায় সবকটি হাওরেই সামান্য কিছু জমিতে ব্রি-২৮ ধান ব্লাস্টরোগে আক্রান্ত হয়ে মরে গেছে। ফলে কৃষকদের ১টি বড় অংশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন।

জগন্নাথপুর উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংরক্ষন কর্মকর্তা তপন চন্দ্র শীল জগন্নাথপুর নিউজ ডটকমকে জানান, উচ্চফলনশীল ও আগাম জাতের হিসেবে জগন্নাথপুরের কৃষকরা ব্রি-২৮ ও ব্রি-২৯ চাষে বেশী মনোযোগী। গত দুই বছর ফসল হারিয়ে অনেক কৃষক অগ্রহায়ন মাসে ব্রি-২৮ চাষ করেন। শুধুমাত্র তাদের জমির ধান টান্ডা জনিত কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। যারা নিয়ম মেনে পৌষ মাসে চাষাবাদ করেছেন তাদের জমিতে ব্রি-২৮ ফলন ভাল হয়েছে।

জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শওকত ওসমান মজুমদার জগন্নাথপুর নিউজ ডটকমকে বলেন, জগন্নাথপুর উপজেলায় ব্রি-২৮ ব্লাস্টে আক্রান্ত হয়ে যৎসামান্য ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। অধিকাংশ কৃষকই ব্রি-২৮ আবাদ করে বাম্পার ফলন পেয়েছেন। তিনি বলেন, হাওর অঞ্চলের প্রকৃতির কথা বিবেচনা করে নতুন জাতের ধান আবাদের গবেষনা চলছে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published.

© All rights reserved © 2017-2023 Jagannathpurnews.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com